শেষ চিঠি

গল্প শুরু

রিমঝিম বৃষ্টির শব্দে ভিজে যাচ্ছিল সন্ধ্যাবেলা। ছাদে বসে ছিল অনামিকা। তার হাতে এক পুরোনো হলুদ হয়ে যাওয়া খাম। তাতে লেখা ছিল—
“অনামিকার জন্য, শুধু অনামিকার জন্য”

চিঠির কালি মুছে যাওয়ার উপক্রম, কিন্তু প্রতিটি শব্দ যেন আগুনের মত জ্বলছিল তার চোখে।


পাঁচ বছর আগের কথা...

তখন অনামিকা আর অরিত্রর সম্পর্ক নতুন ছিল। প্রতিদিন সকালে ছাদের কোণায় বসে তারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকতো। অরিত্র বলত—

“তোর চুলে যদি আমি একদিন বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে ঝরে পড়তে পারতাম, কেমন হতো বল?”

অনামিকা হেসে বলত, “তুই এমন পাগলু না হলে তো প্রেমে পড়তাম না।”

কিন্তু ভালোবাসার গল্পগুলো কি সবসময় হাসি নিয়ে শেষ হয়?


বিচ্ছেদের দিন

অরিত্রর বাবার হঠাৎ বদলি। চলে যেতে হলো শহরের বাইরে, একেবারে উত্তরবঙ্গে।
দূরত্বের সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসাও যেন ফিকে হতে লাগল। ফোনের কথা কমতে লাগল, চিঠিও আর আসত না।

তবুও অনামিকা প্রতিদিন সন্ধ্যায় ছাদে বসে থাকত — যেন তার চিঠি আবার একদিন এসে পড়বে।

একদিন সে শুনল খবর — ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছে অরিত্র।


শেষ চিঠি

চিঠিটা সে পেয়েছিল দু’সপ্তাহ পরে।
অরিত্র লিখেছিল—

“অনামিকা,
যদি কখনো আমি ফিরে না আসি, মনে রাখিস—
আমি তোর চুলের ফাঁকে এখনও বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে লুকিয়ে আছি।
আর তোর বুকের ভিতর যেই ব্যথাটা কাঁদে, সেটাতে আমি বাস করি।
তুই আবার হাসবি, আমি জানি।
কিন্তু মাঝে মাঝে একবার ছাদে এসে তাকাবি আকাশের দিকে — আমি ওখানেই থাকব।
ভালোবাসা,
— অরিত্র।”


শেষ দৃশ্য

ছাদের কোণায় বসে অনামিকার চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল। আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো।
তারপর সে মাথা তুলে তাকাল — মেঘের মাঝে একটুকরো আলো ঠিকই ছিল।